শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বার ২০২৫,

আর্ট

২৪ জুলাই অভ্যুত্থান: ছদাহার তারুণ্যের ভূমিকা

বাংলাদেশের তরুণরা, পৃথিবীর প্রাণ—এটি একটি প্রচলিত প্রবাদ, এবং এরই মধ্যে আমরা দেখেছি, তরুণদের ভূমিকা পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে অমূল্য। পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষই তরুণ, এবং তাদের কর্মযজ্ঞে পৃথিবী একেক সময় নতুন দিশা পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের তরুণরা রাজপথে নেমেছে, তাদের সংগ্রামে প্রাণ দিয়েও প্রতিরোধ করেছে বৈষম্যকে।

তাঁদের এই সাহসিকতা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তরুণরা জীবনের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছিল। রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা অনেক তরুণই এই সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে, তরুণরা মানবঢাল হয়ে কাজ করেছে, আর দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন।

তারুণ্যের শক্তি, ২৪ জুলাই অভ্যুত্থান:
এমনই এক অভ্যুত্থানে, আমরা দেখেছি কিভাবে তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান টগবগে যুবকরা মৃত্যুকে পরোয়া না করে সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছিলেন। আবু সাঈদ, ফয়সাল শান্ত কিংবা ওয়াসিম—তারা সকলেই মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করে গোলাবারুদ এবং টিয়ার গ্যাসের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু তারা মাথা নত করেনি কোনো অপশক্তির কাছে। তাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত রাজপথে আমরা পেয়েছি ফ্যাসিবাদ মুক্ত একটি নতুন দেশ। তাদের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ আমাদের দিয়েছেন একটি বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ গড়ার অঙ্গীকার।

তাঁরা মানবিকতার বাণী শুনিয়েছেন শ্লোগান দিয়ে: "পানি লাগবে? পানি!"—এটি তাদের অদম্য মনোবলের প্রতীক। বৈষম্যহীন আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার মিছিলে, ছদাহার তরুণরা কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না। কেউ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউ প্রাণের মায়া ত্যাগ করে অগ্রসেনানী হয়েছেন। এমনকি মনোহর চৌধুরী পাড়ার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাবিব উল্লাহ হামীমের মতো সাহসী সন্তানেরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিন, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য জোবায়ের হোসেন আরিফ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সাংবাদিক ইকবাল মনোওয়ার, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল জাবের, চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন, ছাত্রনেতা শাহেদুল ইসলাম সহ ছদাহার অসংখ্য তরুণ এবং শিক্ষার্থী আজকের বাংলাদেশের গণহত্যা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের সংগ্রাম আমাদের জন্য এক আলোকবর্তিকা।

তাদের হাতে গড়াই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে শান্তি, সম্প্রীতি, এবং অগ্রগতি।

অতএব, তরুণদের ভূমিকা:
বর্তমান বাংলাদেশে নানা সমস্যা যেমন দুর্নীতি, ঘুষ, সামাজিক অনাচার, দখলদারি ইত্যাদি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব সমস্যার বিরুদ্ধেও, তরুণদেরকে সজাগ থাকতে হবে এবং সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। তরুণরা তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং সাহস দিয়ে এই অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। সামাজিক মাধ্যম এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা জনমত গঠন করতে পারে, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মুখোশ খুলে দিতে পারে।

তরুণদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং সংগ্রামই পারে এই সামাজিক ব্যাধিগুলো নির্মূল করতে, এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। তাদের এই অদম্য স্পৃহা, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ আমাদের জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা। তারা প্রমাণ করেছে যে, তারুণ্যের শক্তি সত্যিই অসীম

তরুণদের হাতেই গড়ে উঠবে আগামী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, যেখানে বৈষম্য থাকবে না, থাকবে শুধু শান্তি, সম্প্রীতি আর উন্নয়ন।