বুধবার, ০৬ আগষ্ট ২০২৫,

শিক্ষক মোহরম বেগম এর ছবি

অদম্য ইচ্ছা আর পরিশ্রমের গল্প: মোহরম বেগমের এগিয়ে যাওয়া

মোহরম বেগম: ছদাহার অদম্য নারী, শিক্ষকতার জগতে সাফল্যর গল্প

কৃষক পরিবারের সদস্য হিসেবে মোহরম বেগমের জন্য পড়াশোনা কখনোই সহজ ছিলো না। তবে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম এবং কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে শিক্ষকতার পেশায় সফলতা অর্জন করেছেন। আজ তিনি মাদারবাড়ি নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত, এবং তার জীবনযাত্রা এক শক্তিশালী উদাহরণ হয়ে উঠেছে সকল নারীর জন্য যারা সমাজের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে চায়।

শিক্ষাগত জীবন:

মোহরম বেগমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল পূর্ব ছদাহা গ্রামীণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি ছদাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। তার পরবর্তী শিক্ষা জীবনের পথচলা ছিলও বেশ চ্যালেঞ্জিং। ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ২০০৫ সালে বারো আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) সম্পন্ন করেন এবং ২০০৯ সালে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষকতা জীবনে পদার্পণ:

মোহরম বেগমের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষকতার মাধ্যমে। ২০০৮ সাল থেকে তিনি ছদাহা এ.আই প্রি ক্যাডেট (আয়েশা ট্রাস্ট) স্কুলে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন, এবং ২০১২ সালের ৪ জুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি মাদারবাড়ি নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং এখানে তার অভিজ্ঞতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক এবং শারীরিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন।

লেখালেখির প্রতি আগ্রহ:

শুধু শিক্ষকতা নয়, মোহরম বেগম লেখালেখির প্রতি নিজের আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রামের আবির প্রকাশন থেকে তার লেখা কবিতা সংকলন "প্রেম পাথারে সে সাঁতরে" এবং "প্রহর কাটে স্বপ্ন ছুঁয়ে" প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতাগুলো জীবনের আশা, সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প বলে।

কৃতজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণা:

মোহরম বেগম তার সফলতার পেছনে বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তার চাচাত ভাই মাস্টার আবুল খায়ের স্যার, শিক্ষিকা নাজমা বানু এবং পরিবারের প্রতি, যারা তাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন এবং তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছেন। তিনি আজকের প্রজন্মকে বলেন, “মনে সৎ ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য পোষণ করলেই সাফল্য আসবে।” তার জীবনের গল্প তরুণদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

উপসংহার:

মোহরম বেগমের জীবনযাত্রা প্রমাণ করে যে, সৎ ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং দৃঢ় মনোবল দিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা জয় করা সম্ভব। তিনি একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছেন সমাজের জন্য, বিশেষত নারীদের জন্য, যারা নিজের জীবনকে সফল করতে চান। তার সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প ছদাহা এবং তার আশপাশের সমাজের প্রতিটি নারীকে অনুপ্রাণিত করবে।