বুধবার, ০৬ আগষ্ট ২০২৫,

জনাবা আয়েশা ইসলাম

নারীর এগিয়ে যাওয়া: ছদাহার আয়েশার সংগ্রামী জীবন ও সফলতার গল্প

পরিচিতি: নারীর এগিয়ে যাওয়া, সমাজের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তার স্বপ্নের পেছনে ছুটে যাওয়ার প্রেরণার গল্প, ছদাহার জীবনে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছে। আজকের এই সফল উদ্যোক্তা এবং সমাজকর্মী, যিনি শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, বরং নিজের কর্মজীবন ও সমাজসেবার মাধ্যমে আরও অনেক নারীকে অনুপ্রাণিত করেছেন, তার সংগ্রামী জীবন এক অমিত উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

শুরুটা ছিলো কঠিন:
ছদাহার জীবন ছিলো সহজ না। সমাজের নারীদের প্রতি যে অনাচার এবং অবিচার প্রচলিত ছিলো, তাতে তাকে প্রতিদিনই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে সে সময়ও তিনি নিজের আত্মবিশ্বাসে কোনোভাবেই পিছিয়ে যাননি। ১৯৭৯ সালে এসএসসি পাস করার পর, ছদাহা উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে ভর্তি হন। তখন তার সামনে এক কঠিন বাস্তবতা ছিল—নারীদের জন্য সমাজে সুযোগের অভাব এবং অনেক বাধা-বিপত্তি। কিন্তু তিনি সেসব কিছু উপেক্ষা করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন।

কর্মজীবন শুরু:
ছদাহার কর্মজীবন শুরু হয়েছিলো তার বাবার হাত ধরে। তিনি শুধু পড়াশোনা করেননি, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করেছিলেন। তার জীবনের প্রথম চাকরি ছিল 'দেশ গার্মেন্টস'-এ, যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। প্রশিক্ষণ নেন এবং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে নিজের পেশাদারী জীবন শুরু করেন।

নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা:
অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে, ১৯৯৩ সালে ছদাহা তার প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যেটি ছিল "মিশু গার্মেন্টস"। মাত্র ৬০টি মেশিন নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠান আজ বড় এক গার্মেন্টস হিসেবে পরিচিত। তার এই উদ্যোগে সহায়তা করেছেন তার স্বামী, যিনি তার সাহস এবং সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি আরও একটি নতুন উদ্যোগ শুরু করেন "তাজিমা এমব্রয়ডারী" নামে। বর্তমানে তিনি 'রোজ এমব্রয়ডারী' নামক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তার পেশাগত জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা, নারীর উদ্যোগী মনোভাব এবং স্বপ্নের প্রতি এক অদম্য ইচ্ছাশক্তির চিত্র।

সমাজসেবায় অবদান:
ছদাহার কেবল পেশাগত জীবনই নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সেবার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। নিজ জন্মস্থান তথা এলাকায় তিনি নানা ধরনের সেবামূলক কাজ করে আসছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন "আয়েশা ইসলাম শিক্ষামূলক জনকল্যান ট্রাস্ট" যা এতিমখানা, হিফজ খানা, এবতেদিয়া নূরানী মাদ্রাসা পরিচালনা করছে। শীঘ্রই ট্রাস্টে চালু হতে যাচ্ছে ফ্রাইডে ক্লিনিক এবং চালু আছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এছাড়া বর্ণগ্রাম নামে একটি লাইব্রেরি তার ট্রাস্টে চালু করা হয়েছে। ছদাহার এই উদ্যোগগুলো সমাজের অবহেলিত অংশের জন্য এক নতুন আশার আলো।

নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথ:
ছদাহার জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়, নারীর জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন যে, নারীরা সমাজের যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন, কেবল প্রয়োজন যথাযথ সুযোগ, আত্মবিশ্বাস এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ছদাহার মতো উদ্যোক্তা এবং সমাজকর্মী একজন মহিলা সমাজের শ্রীবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তার জীবন সংগ্রাম এবং সফলতার গল্প সমাজের প্রতিটি ঘরে নারীর এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে, বিশেষ করে যেখানে নারীদের প্রতি বৈষম্য ও অনাচার রয়েছে।

উপসংহার:
আজকের এই ছদাহা, একজন সফল উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী এবং নারীর এগিয়ে যাওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার সংগ্রামী জীবন এবং স্বপ্নপূরণের পথচলা নারীদের জন্য একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতো আরো অনেক নারী যেন এগিয়ে আসে, তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত করতে, এই প্রত্যাশা ছদাহার জীবনকথায় প্রতিফলিত হয়। ছদাহার পথচলা, তার সাহস ও দক্ষতা সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং উন্নতির জন্য একটি চিরকালীন প্রেরণা হয়ে থাকবে।