
ছদাহা ইউপি
ছদাহা ইউনিয়ন: ইতিহাস, নামকরণ ও প্রশাসনিক বিবর্তন
ছদাহা ইউনিয়ন: ইতিহাস ও নামকরণ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন হলো ছদাহা। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই ইউনিয়নের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। নিচে এর গঠন, প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং নামকরণের পেছনের বিভিন্ন জনশ্রুতি তুলে ধরা হলো।
ছদাহা ইউনিয়নের প্রশাসনিক ইতিহাস
আনুমানিক ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে সাতকানিয়া-চট্টগ্রাম মহকুমার অধীনে বর্তমান সাতকানিয়া ও ছদাহা—এই সাতটি গ্রাম নিয়ে সর্বপ্রথম ছদাহা ইউনিয়ন গঠিত হয়। সে সময় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গ্রাম প্রেসিডেন্ট বলা হতো। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান শাসনামলে এই 'গ্রাম প্রেসিডেন্ট' পদটিকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদবীতে রূপান্তরিত করা হয়।
-
প্রথম গ্রাম প্রেসিডেন্ট: ১৯৫৪ সালে প্রথম গ্রাম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ মজহেরুল ওয়াদুদ।
-
পরবর্তী গ্রাম প্রেসিডেন্টগণ: এরপর পর্যায়ক্রমে মৌলভি আবুল হোসেন চৌধুরী এবং আজিজুর রহমান (আজু মিয়া) এই পদের দায়িত্ব পালন করেন।
-
প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান: ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান মহকুমা জুরি বোর্ডের সদস্য আবুল মকছুম চৌধুরী প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
-
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবুল মকছুম চৌধুরী দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
-
বর্তমান ছদাহা ইউনিয়ন: ১৯৮৫ সালে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য তৎকালীন প্রশাসক কর্তৃক ছদাহা ইউনিয়নকে পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমানে ছোট-বড় ১৯টি গ্রাম নিয়ে ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়েছে।
ছদাহা নামকরণের জনশ্রুতি
ছদাহা ইউনিয়নের নামকরণের পেছনে দুটি জনপ্রিয় জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে।
-
আল্লামা শুকুর উল্লাহ শাহ (রহঃ)-এর প্রস্তাব: একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, আল্লামা শুকুর উল্লাহ শাহ (রহঃ) ছিলেন ছদাহার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। সে সময় এই অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল, যদিও বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতিতে আল্লামা শুকুর উল্লাহ শাহ (রহঃ) প্রথম 'ছদাহা ইউনিয়ন' নামকরণের প্রস্তাব করেন।
-
বড় মাজারের প্রভাব: আরেকটি জনশ্রুতি অনুসারে, এগারগ্রাম, আজিমপুর, আফজলনগর, ছোটডেমশা, সারাসিয়া, খোদ্দেকউচিয়া সহ আরও কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি বড় মাজার থাকায় এই অঞ্চলের নাম 'ছদাহা' রাখা হয়।
ঐ সময়ে ছদাহা ইউনিয়নের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল পায়ে হেঁটে চলাচল। এ কারণে ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে মানুষকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হতো। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তিত হলেও, এই ইতিহাসগুলো ছদাহার মানুষের ঐতিহ্য ও শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগিয়ে রাখে।