বুধবার, ০৬ আগষ্ট ২০২৫,

আলহাজ্ব কেফায়েত উল্লাহ

তিমির ভেদ করে আলো জ্বালানো এক মানুষ: কেফায়েত উল্লাহ

ছদাহার আলোকবর্তিকা আলহাজ্ব কেফায়েত উল্লাহ ছিলেন ছদাহার প্রথম আলোকবর্তিকা, দীর্ঘদিনের অবহেলিত ছদাহার উন্নয়নের পথিকৃৎ। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করা এই মানুষটি ছিলেন নির্লোভ ও নিরহংকারী। সারা জীবন তিনি মজলুম ও অসহায় মানুষের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন আপোষহীন। পল্লী বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে তিনিই প্রথম ছদাহাকে আলোকিত করেন, যা ছদাহার মানুষের কাছে আধুনিক বিশ্বের দুয়ার খুলে দেয়। তাঁর তুলনা আকাশে অসংখ্য তারার মাঝে একমাত্র চাঁদের সাথে করা যায়, কারণ তাঁর অবদান ছিল অতুলনীয়।

আধুনিক ছদাহার রূপকার ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত টানা দীর্ঘ ১২ বছর তিনি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণের সেবা করেছেন। এই সময়টি ছিল ছদাহার স্বর্ণালী অতীত। তাঁর আমলেই ছদাহার মানুষ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় এবং আধুনিক বিশ্ব ও যুগের সাথে পরিচিত হয়। স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, মসজিদ-মক্তব নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি ও সংস্কার, অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন এবং ছদাহার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়ন ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। ছদাহা কেফায়েত উল্লাহ-কবির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে যে বিপ্লব সাধন করেছেন, তা আজও ছদাহার নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করছে। এই স্কুল থেকে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসেছেন যারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন।

মানবপ্রেমী ও জননেতা আলহাজ্ব কেফায়েত উল্লাহ ছিলেন গণমানুষের নন্দিত নেতা ও ভালোবাসার পাত্র। তিনি ছিলেন সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ। সমাজে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি সবাইকে আপন করে নিতেন। একজন সহজ-সরল মানুষ হিসেবে তিনি গ্রামের সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে মিশেছেন। তাঁর মানবিক গুণাবলী এতটাই প্রখর ছিল যে, তাঁর আমলে ছদাহায় চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধ ছিল না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্কুটার নিয়ে গ্রামের প্রতিটি প্রান্তে ছুটে বেড়াতেন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা শুনতে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে। তাঁর এই নিঃস্বার্থ সেবা ও ভালোবাসার কারণে তিনি আজও ছদাহার আপামর মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

মরহুম আলহাজ্ব কেফায়েত উল্লাহ সাহেব ছিলেন ছদাহার আলোকবর্তিকা—একজন নির্লোভ, নিরহংকারী ও আপোষহীন জননেতা। তাঁর অবদান ছদাহার ইতিহাসে চির অম্লান। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। - এহসান

পারিবারিক পরিচয় ও ঐতিহ্য আলহাজ্ব কেফায়েত উল্লাহ ১৯৫২ সালে ছদাহার ঐতিহ্যবাহী মুফতি বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ জমিদার মাওলানা কেরামত আলী ছিলেন একজন দানশীল ও গুণী ব্যক্তি, যিনি অবিভক্ত ভারতের মুফতিয়ে আজম মুফতি ইয়ার মুহাম্মদ (রহঃ) এর সুযোগ্য বংশধর ছিলেন। মাওলানা কেরামত আলী সমাজের কল্যাণে তাঁর সম্পত্তির ৪৩ ধুন ১৩ হানি ৩ গণ্ডা ওয়াকফ করে গেছেন। বর্তমানে এই সম্পত্তির মুতায়াল্লি হিসাবে কেফায়াতুল্লাহর মেঝ মেয়ে ফারজানা কেফায়াতুল্লাহ লুনা নিযুক্ত আছেন। কেফায়েত উল্লাহর ছয় কন্যা সন্তান প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত এবং দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বে আলো ছড়াচ্ছেন। মৃত্যু ও চিরবিদায় ২০০৬ সালের ২৬ মে, ওপেন হার্ট সার্জারির সময় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ছদাহার মানুষ গভীর শোক আর কৃতজ্ঞতায় তাঁকে বিদায় জানায়। তাঁর জানাজায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন মানুষের হৃদয়ের নেতা। তাঁকে নল্লা পুকুরপাড়ের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।  উপসংহার: অনন্ত অনুপ্রেরণার প্রতীক আজও ছদাহা কেফায়াত উল্লাহ-কবির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র, প্রতিটি সফল মানুষ তাঁর স্মরণে মাথা নিচু করে। তিনি ছিলেন ছদাহার সেই চাঁদ, যাঁর আলো আজও ছড়িয়ে আছে তারার মতো। তাঁর মত নিঃস্বার্থ সমাজসেবক, শিক্ষা-প্রেমিক, ত্যাগী ও সাহসী নেতৃত্ব আজকের সমাজে দুর্লভ।