
সন্তানদের সাথে শাহেদা হাশেম
শাহেদা হাশেম: সন্তানদের সাফল্যে একজন রত্নগর্ভা মায়ের নিষ্ঠা ও পরিশ্রম
শাহেদা হাশেম: একজন আদর্শ মা এবং সফল সন্তান গড়ার দৃষ্টান্ত
শাহেদা হাশেম। তাঁর পরিচয় শুরু করা যায় আলোকিত মানুষ মরহুম এমএ সালাম স্যারের মেয়ে কিংবা বাহাদুর স্যারের বোন হিসেবে। তবে, আজ তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে একজন সফল মা, যিনি তার তিন সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন এবং তাদের সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছানোর পথ সুগম করেছেন।
সময়টা ছিলো ১৯৮৪ সাল, যখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। সপরিবারে দোহাজারী স্কুলের কোয়ার্টারে থাকতেন। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারসহ নিজ গ্রামে চলে আসেন। গ্রামে এসে ভর্তি হন ছদাহা কেঁওচিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, কিশোর বয়সে বাবার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা এবং বাবাকে কাছে থেকে দেখে যা শিখেছেন, সেই আদর্শ ধারণ করেই তিনি এতদূর এসেছেন। এসব অভিজ্ঞতা তার সন্তানদের মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
শাহেদা হাশেমের তিন সন্তানই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তার বড় ছেলে নাজমুল রাসেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে পাস করে বর্তমানে জজ হয়েছেন। মেঝো ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন এবং ইউএনডিপিতে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে হাফেজ হয়েছেন এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। শাহেদা হাশেম তার স্বামী ছিলেন প্রবাসী, যার কারণে সংসারের উপর বাড়তি চাপ ছিল। তবে তিনি কখনও দমে যাননি। সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে নিজের সর্বোচ্চ দিয়েছেন এবং তাদের পড়াশোনা তদারকি করতে নিয়মিত স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
এ প্রসঙ্গে শাহেদা হাশেম বলেন, "সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করাটাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য। তাদের ছোটবেলা থেকেই সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদির পার্থক্য বুঝাতে সচেষ্ট ছিলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য কোথাও যাচ্ছে কিনা, কোথায় যাচ্ছে, কি করছে রোজ এসবের খবরাখবর রাখতাম।"
এটি প্রমাণিত যে, একজন সন্তানের সুশিক্ষা ও আদর্শ মানুষ গড়ার পিছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। শাহেদা হাশেম নিজের জীবনদর্শন ও সন্তানদের গড়ে তোলার পথ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি মায়েদের পরামর্শ দিয়েছেন, সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হতে। কারণ, সন্তানকে পরিবারের সবচেয়ে বেশি সময় দিতে পারে একজন মা। মায়ের কঠোর শাসন এবং নজরদারি থাকলে সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।
শাহেদা হাশেমের বাড়ি ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত রোয়াজির পাড়ায়। তার জীবন এবং সংগ্রাম, তার সন্তানদের সাফল্য এবং পরিশ্রমী মায়ের গুণাবলি আমাদের সবার জন্য একটি চিরকালীন প্রেরণা হয়ে থাকবে।